মুজাহাদা – সাফল্যের রাজপথ

Uncategorized

মুজাহাদা – সাফল্যের রাজপথ

একজন ছাত্র পরীক্ষার রাতে দীর্ঘ সময় পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত থাকে কোন আয়োজনে কিংবা বিনোদনে। তারও তাদের সঙ্গ দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে পারে না। সে বই-খাতা নিয়ে পড়ে থাকে। আর সহ্য করে যায় অন্যদের সাথে শরীক হতে না পারার বেদনা। এক সময় রেজাল্ট বের হয়। ভালো রেজাল্টের স্বাদ তার কষ্টগুলো ধুয়ে দেয়।
রোগী অসুস্থতায় কাতরাতে থাকে। সাধারণ পথ্যই হয় তার খাবার। সবাই মজা করে খায়। সে রোগের কারণে খেতে পারে না। কেবল চেয়ে চেয়ে দেখে। তার খুবই কষ্ট হয়। এক সময় সে সুস্থ হয়ে যায়। সুস্থতার আনন্দ তাকে বঞ্চনার কষ্টগুলো ভুলিয়ে দেয়।
এভাবে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মানুষ কষ্ট করে। তাকে কষ্ট সহ্য করতে হয়। কত জিনিস ত্যাগ করতে হয়! যে এভাবে বৃহত্তর স্বার্থে কষ্ট করে যায়, তার জীবনে এক সময় সাফল্যের বসন্ত নামে।
নফসের উল্টো চলা, জোর করে নিজেকে দ্বীনের উপর চালানোর বিষয়টাও এমন। কেবলই নিজের সাথে বুঝাপড়া। মানুষ দুনিয়ার স্বার্থেই তা করে। যদি সুন্দর আখিরাতের জন্যেও সে করতে পারে তবেই তার জীবন অর্থবহ হয়। ঈমান এই বুঝাপড়াকে সহজ করে দেয়। অরুচির মধ্যেও রুচি তৈরি করে। বিস্বাদের মধ্যেও সৃষ্টি করে স্বাদ। এ জন্যই প্রয়োজন ঈমানের মেহনত এবং ক্রমাগত মুজাহাদার।
মনে করো, তুমি এক মুসাফির। একা পথ চলেছো। তোমার সামনে দুটি পথ। একটি কঠিন, পথ চলতে কষ্ট, পাহাড়ের উপর দিয়ে চলে গেছে। অন্যটি মসৃণ, ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে নীচের দিকে, পথচলা বড় সহজ।
প্রথমটি এবড়ো-থেবড়ো, মাঝে মাঝে খাদ, বড় বড় অমসৃণ পাথর। পথচলা বড় কষ্ট। ভ্রমন সুখকর নয়। কিন্তু তার সামনে একটা ফলক, যা স্থাপন করেছে সরকার। তাতে লিখা- এই রাস্তার শুরুটা অমসৃণ, পথচলা কষ্ট, কিন্তু এটিই সঠিক পথ, যেটি পৌঁছে গেছে বড় শহরে, আকাঙ্খিত গন্তব্যে।
আর দ্বিতীয়টি চলাচলযোগ্য, গাছের ছায়ায় ঢাকা, দু’পাশে ফুল ও ফল। মাঝে মাঝে কফিশপ, তাতে রয়েছে বিনোদনেরও সামগ্রী, যা অন্তরকে মোহিত করে, চোখ তৃপ্তি পায়, কানগুলো সুরের মূর্ছনায় আপ্লুত হয়। কিন্তু পথের শেষে একটা ফলকের উপর লিখা- সাবধান! এটি খুবই বিপদসংকুল পথ, এর শেষে রয়েছে গভীর গর্ত, যাতে পড়লে সাক্ষাৎ মৃত্যু, নিশ্চিত ধ্বংস।
এখন কোন পথ তুমি বেছে নেবে?
এতে কোন সন্দেহ নেই, নফস কঠিনটি বাদ দিয়ে সহজটার দিকেই ঝুঁকবে। কষ্টকর পথ ছেড়ে স্বাদযুক্ত পথেই চলতে চাইবে। স্বাধীনতাকে ভালবাসবে, বন্দীত্বকে অপছন্দ করবে। এটিই নফসের স্বভাব, যে স্বভাবের উপর আল্লাহ তায়ালা তাকে সৃষ্টি করেছেন। যদি মানুষ নিজেকে তার মনের উপর সোপর্দ করে, তাহলে নিশ্চিত সে দ্বিতীয় রাস্তাই অবলম্বন করবে। কিন্তু আকল তাতে বাধা দেবে। আকল বর্তমানের সাময়িক আরামকে পরিণতির কঠিন কষ্টের সাথে ওজন করে দেখবে। অল্প সময়ের কষ্ট সত্ত্বেও অনন্তকালের আরামের কথা চিন্তা করে প্রথম রাস্তাকেই প্রাধান্য দেবে।
এটিই উদাহরণ জান্নাত ও জাহান্নামের রাস্তার।
জাহান্নামের রাস্তায় রয়েছে প্রতিটি স্বাদযুক্ত ভোগের সামগ্রী, যেদিকে নফস ধাবিত হয়। মন যেদিকে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়। সেদিকে আছে দেখার তৃপ্তি, নিষিদ্ধ সৌন্দর্যের হাতছানি, সেদিকে আছে ভোগ আর স্বাদের নগ্ন আহবান, যে কোন উপায়ে সম্পদ আহরণের সুযোগ, সেদিকে আছে বল্গাহীন স্বাধীনতা। নফস মুক্ত থাকতে ভালবাসে, বাধাকে অপছন্দ করে।
আর জান্নাতের পথে আছে কষ্ট, কাঠিন্য। সেপথে আছে সীমা এবং শিকল। সেপথে আছে নফসের বিরোধিতা। কিন্তু এই কষ্ট ও অপছন্দের বিনিময়ে আছে অনন্ত স্বাদ।
এখন তুমিই ঠিক করো, তুমি কোন পথে আগাবে!