নিভৃতচারী আল্লাহওয়ালাদের খোঁজে ১
নিভৃতচারী আল্লাহওয়ালাদের খোঁজে ১
হজরতের গড়া ছোট্ট, অথচ সুন্দর মাদ্রাসা। মাদ্রাসা থেকে এক ছাত্রকে রাহবার হিসেবে সাথে নিয়ে যখন হজরতের বাড়ির দিকে চললাম, তখন সাতটা চল্লিশ। মোবাইলটা বেজে উঠতেই কানে বাজলো হজরতের স্নেহপূর্ণ সম্বোধন।
-” বা-জি আইসতে লাইগ্গো, না?”
-” জী হুজুর! আইর। আর কয়েক মিনিট লাগিবো।”
হুজুরের নম্বর আমার কাছে ছিলো না। আমতলি মাদ্রাসার ক্বারী মঈনুদ্দীন সাহেবকে বলেছি হজরতের কাছ থেকে এপয়েন্টমেন্ট নিতে। হজরত শুনে এখন নিজেই ফোন দিলেন।
ফেতনার সমুদ্রে এখন হাবুডুবু খাচ্ছি আমরা। ফেতনা দ্বীনি মহলগুলোতেও হানা দিতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় নিজেকে হিফাজতের সম্বল মাত্র দুটি, এক হচ্ছে ইলম, দুই মুখলিস আল্লাহওয়ালাগনের সোহবত। এ কথা খুবই অন্তর থেকে অনুভব করছি। এ উদ্দেশ্যেই আমরা ক’জন মিলে নিভৃতচারী আল্লাহওয়ালাদের তালাশ করে বেড়াচ্ছি। যারা প্রসিদ্ধ নন, অথচ ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের অলংকার তাঁদের সজ্জ্বিত করে রেখেছে। হাদীসে ইনাদেরকেই বলা হয়েছে হিদায়াতের চেরাগ, যাদের ওসীলায় ফিতনা মিটে যায়।
হজরত বাড়িতেই থাকেন। নিজের সবকিছু সন্তানদের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে অনেক দিন ধরে আখিরাতের সফরের অপেক্ষায় আছেন।
হজরত প্রথমে ডিগ্রী পাশ করেছেন, এরপর মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছেন। লালবাগে পড়াশুনা কালে তাবলীগের কাজে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন। কিভাবে তাবলীগের সাথে লাগলেন তা এভাবেই আমাদের শুনাচ্ছিলেন।
-” সদর সাহেব হুজুর ( আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহঃ) একদিন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ ইউসুফ! তুমি কাকরাইলে যাও না?’
আমি বললাম, ‘ হজরত তাদের কথা আমার একদম ভালো লাগে না। আমরা তো এক বিষয়ের উপর ঘন্টা দুই ঘন্টা আলোচনা করি। আর তারা কতক্ষণ ঈমান, এরপর অল্পক্ষণ নামাজ, অতঃপর ইলম ও যিকর… ‘ হুজুর বললেন, ‘ না না ইউসুফ! তুমি কাকরাইলে যাও। তাঁরা ঈমানের উপর সুন্দর সুন্দর আলোচনা করেন, তোমার ভালো লাগবে।’
সেই থেকে আমার কাকরাইলে যাওয়া- আসা শুরু। তখন শবগুজারিতে সর্বোচ্চ শত দেড়শ’ মানুষ হয়।
একদিন এরশাদ ভাই আমাকে বললেন, ইউসুফ ভাই! মুরুব্বীরা বলেন, দাওয়াত ছে ঈমান আ-তা হ্যায়, হিজরত ছে ইয়াকীন আ-তা হ্যায়। জা-নি হিজরত ছে আল্লাহ ছে হু-নে কা ইয়াকীন, মা-লি হিজরত ছে গাইরুল্লাহ ছে না হু-নে কা ইয়াকীন আ-তা হ্যায়।
মুজাহাদা ছে নামাজ আ-তা হ্যায়, যিকর ছে ইলম আ-তা হ্যায়, ফিকর ছে যিকর আ-তা হ্যায়, মহব্বত ছে ফিকর আ-তা হ্যায়। ছোট কি খিদমত ছে ইকরামুল মুসলিমীন আ-তা হ্যায়, বড় কি খিদমত ছে রিয়া ও কিবর আ-তা হ্যায়। দুনিয়া কি বেরগবতি ছে ইখলাস আ-তা হ্যায়, কুরবানি ছে তাবলীগ আ-তা হ্যায়। গাই বাহিষ জবাহ করনে কা নাম কুরবানি নেহি, দ্বীন কি তাকাজা পর লাব্বাইক কেহ না কা নাম কুরবানি হ্যায়।’
শুনে মনে মনে বললাম, এখানে তো সব এসে গেলো। তবলীগের বারো উছুল ছয় সিফাত আনার জন্যেই। যদি বারো উছুলের উপর জিন্দেগি না উঠে, ছয় সিফাত জীবনে কখনও আসবে না। “
হজরত এভাবে ঘন্টা খানিক শুনিয়ে গেলেন। বললেন, এখন তো সময় বেশি দিতে পারি না। বয়স ছিয়াত্তর হতে চললো, সাথীরা এখানে জামাত পাঠিয়ে দেয়, তাদের সাথে সময় কাটাই। আর মসজিদ আবাদের মেহনত করি। শায়খুল হাদীস জাকারিয়া সাহেব রহঃ এর খলিফা মৌলানা যোবায়ের আহমদ মজিআ দাওয়াতের মেহনত উছুলের সাথে করতে থাকবো এই হিদায়াতের উপর অধমকে ইজাজত দিয়েছিলেন। এখনও তার উপরই আছি।”
ইনি হজরত আল্লামা মুহম্মাদ ইউসুফ শাহনগরী হাফিজাহুল্লাহ। নানুপুরের হজরত আল্লামা জমির উদ্দীন রহঃ এর খলিফা।