চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করা ফরজে কেফায়া
চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করা ফরজে কেফায়া
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন ও চর্চা করার জন্য নির্বাচন করেছেন। এই কাজে আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ ব্যয় হবে ইন শা আল্লাহ। আমাদের জানা থাকা চাই, আমাদের এই ব্যস্ততা হবে এক ফরজ দায়িত্ব আদায় করার উদ্দেশ্যে। মানব জাতি তাদের সুস্থতা এবং বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা ও চিকিৎসকের মুখাপেক্ষী। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি।
কাজেই চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করা এবং তার চর্চার মাঝে নিয়োজিত থাকা শরঈ দৃষ্টিকোন থেকে এর অবস্থান আমাদের জানা থাকা জরুরী।
ফুকাহাগন এই কথা লিখেছেন,
” الطب من فروض الكفاية ، فإن الحرف والصناعات التي لا بد للناس منها في معايشهم -كالفلاحة – فرض كفاية ، فالطب والحساب أولي . روضة الطالبين (٣٢٢/١) ، الفقه الطبي ١٣
” চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষা করা ফরজে কেফায়ার মধ্য থেকে, কেননা ঐ সমস্ত পেশা ও কাজ যা মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য, তা শিক্ষা ও চর্চা করা ফরজে কেফায়া, যেমন কৃষিকাজ। কাজেই চিকিৎসা বিজ্ঞান ও গণিত ফরজে কেফায়া হওয়া অধিকতর যুক্তিযুক্ত। ” – রাওজাতুল তালিবীন, ৩২২ পৃষ্ঠা, ১ম খন্ড, আল ফিকহুত তিব্বী, ১৩ পৃষ্ঠা।
ফরজে কেফায়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কোন জাতি, গোষ্ঠী অথবা এলাকার কিছু মানুষ যদি ঐ কাজ সম্পাদন করে, তাহলে সবার পক্ষ থেকে দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে, আর যদি যথেষ্ট পরিমান মানুষ ঐ কাজ সম্পাদনে ব্যস্ত না থাকে, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। – আল ফুরুক্ব, ইমাম কারাফী রহঃ, আল মুগনী, ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ।
চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন ও চর্চা করা ফরজ হওয়ার দলিলসমুহঃ
১) মাকাসিদে শরীয়ার দাবী হলো পাঁচ জিনিসের হেফাজত, এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীর ও মেধার হেফাজত, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যয়ন, চর্চা এবং তাতে দক্ষতা অর্জন ছাড়া এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কাজেই ইহা ফরজে কেফায়া হবে।
২) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বেদুইনকে চিকিৎসা করার হুকুম করেন।
عن أسامة بن شريك رضي الله عنه قال كنت عند النبي صلى الله عليه وسلم ، و جائت الاعراب فقالوا يا رسول الله انتداوي؟ فقال “نعم يا عباد الله ، تداووا فإن الله لم يضع داء إلا وضع له شفاء غير داء واحد ‘ قالوا ما هو ؟ قال الهرم. رواه أبو داود و ابن ماجه والترمذي وقال حسن صحيح.
হজরত ওসামা ইবনে শারীক রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে ছিলাম। এমন সময় একদল গ্রাম্য বেদুইন এলো। তারা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি চিকিৎসা করাবো? তিনি বললেন, ” হ্যাঁ, হে আল্লাহর বান্দাগন! তোমরা চিকিৎসা করাও। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এমন কোন রোগ দেন নি, যারা চিকিৎসা তিনি রাখেন নি, কেবল একটা রোগ ব্যতিত। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, কোন রোগ? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মৃত্যু। ‘ আবু দাউদ, ইবনু মাজা, তিরমিজী, ইমাম তিরমিজী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান এবং সহীহ।
সাধারণত গ্রাম্য বেদুইনদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে, ফলে তাদের রোগব্যাধিও কম হয়ে থাকে। এরপরও তাদের যখন চিকিৎসা করতে বললেন, যারা নগরজীবনে অভ্যস্ত, তাদের তো রোগব্যাধি আরও বেশি হয়, তাদের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি।
৩) রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিজের চিকিৎসা নেয়া, তাঁর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসক উপস্থিত হওয়া, সাহাবাদের কাউকে কাউকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে রাসুলের রেফার করা চিকিৎসার গুরুত্ব বুঝার পক্ষে দলিল।
৪) সহীহ মুসলিম এর অন্য আরেকটি হাদীস দ্বারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়।
عن جابر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لكل داء دواء فإذا أصيب دواء الداء برئ بإذن الله عز وجل. رواه مسلم.
হজরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ ( চিকিৎসা) রয়েছে। যখন রোগের (সঠিক) ঔষধ নেয়া হয়, তখন রোগী আল্লাহর হুকুমে সুস্থ হয়ে যায়। (মুসলিম)
قال ابن القيم رحمه الله في قول النبي صلى الله عليه وسلم – لكل داء دواء- تقوية لنفس المريض والطبيب و حث علي طلب ذلك الدواء والتفتيش عليه .
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহঃ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বানীতে রোগী এবং ডাক্তার উভয়ের মনোবল বৃদ্ধির বিষয় রয়েছে এবং রোগের ঐ সঠিক চিকিৎসা তলব করা এবং তার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর প্রতি উৎসাহ রয়েছে।
রাসুলের এই হাদীস শুনে রোগীরও সুস্থ হওয়ার আশা সৃষ্টি হবে, ডাক্তারও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করার হিম্মত লাভ করবেন এবং সঠিক ঔষধ নির্বাচন এবং সঠিক রোগ নির্ণয়ে ব্রতী হবেন।
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই হাদীস দ্বারা ফার্মাসী, ফার্মাকোলজী, প্যাথলজী, ক্লিনিক্যাল মেডিসিন, সার্জারীসহ অন্যান্য সব সাবজেক্টেরই গুরুত্ব ফুটে উঠে। কারন এই সব শাস্ত্র ছাড়া তো সঠিক রোগের সঠিক চিকিৎসা সম্ভব হবে না।